মৌসুমি ফলের সুফল
এখন বর্ষাকাল। কখনো প্রচণ্ড রোদ। গরমে শরীর ঘেমে যায়। আবার কখনো বৃষ্টি। ঠান্ডা বাতাস। গরম আর ঠান্ডা মিলে নানা অসুখ–বিসুখ লেগেই থাকে। এ সময়ের ভাইরাস জ্বর, জন্ডিস, ডায়রিয়া ধরনের রোগ বেশি হয়। এ ছাড়া অনেকে অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগে।
বৃষ্টির পর অনেক সময় গুমোট গরম লাগে। কারণ, ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানির স্বল্পতা ও ইলেট্রোলাইটে ভারসাম্যহীনতা হয়। সহজেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
রোগ হলে তো ওষুধ খেতেই হয়। তবে রোগ ঠেকাতে কাজে দেয় কিছু ফল। এসব ফল খুব সহজলভ্য। মৌসুমি ফলগুলো অসুখ থেকে বাঁচায়। অনেক সময় স্বস্তিও দেয়। এ রকমই মৌসুমি কিছু ফলের গুণ জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম. আখতারুজ্জামান।
আম: আমের নাম শুনেই জিবে জল আসে না এমন মানুষের দেখা পাওয়া খুব কঠিন। ফলটি শুধু স্বাদে নয়, গুণেও অনন্য। পাকা আম ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল। ১০০ গ্রাম আমে ১০০০ থেকে ১৫০০ আইইউ ভিটামিন ‘এ’ থাকে। এ ছাড়া আমে ভিটামিন বি ও সি, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম থাকে। চোখের নানা রোগ, চুলপড়া, খসখসে চামড়া, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে পারে আম।
জাম: রোগ নিরাময়ে জামের ভেষজ গুণ অনেক। শুধু এর নরম মাংসই নয়, এর বীজও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আনারস: সুস্বাদু ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল হলো আনারস। সর্দি-কাশিতে আনারস খেলে কাজে দেয়। কৃমি সারাতেও এটি কার্যকর।
তরমুজ: তরমুজ আমাদের দেশের অতি পরিচিত এবং সবার প্রিয় ফল। এটি এখন প্রায় সব সময়ই পাওয়া যায়। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পানি। অতিরিক্ত ঘাম এবং তৃষ্ণা দূর করতে তরমুজের রস খুবই কার্যকর। কাজের কারণে ক্লান্তি যতই আসুক তরমুজের রস খেলে অল্প সময়েই ক্লান্তি দূর হয়। তরমুজের বীজ বেটে ঠান্ডা পানিতে চিনিসহ মিশিয়ে খেলে যকৃৎ পরিষ্কার থাকে।
পেঁপে: পেঁপে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপেতে আছে প্যাপাইন। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পাকা পেঁপে খুব কার্যকর। কাঁচা পেঁপে ডায়রিয়া ও জন্ডিসে সারায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে জুস করে খাওয়া যায়।
শসা: গরমে প্রশান্তি দেয় শসা। গরমে শরীরে যে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়, তা শসার মাধ্যমে অনেকটা পূরণ করা যায়। শসা ত্বকের জন্য ভালো।
লেবু: পেট ফাঁপা, পেটের সমস্যা, ঠান্ডা, সর্দি-কাশিতে লেবু খুবই উপকারী। লেবুতে আছে ভিটামিন সি। জ্বর ও মুখের ঘা দূর করতে লেবুর ভূমিকা অনন্য।
কাঁঠাল: কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। পাকা কাঁঠালের ক্যালরি মূল্য প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি। মোট খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯। কাঁচা কাঁঠালে আঁশের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই।
পানিফল: পানিফল আরেকটি পুষ্টিকর ফল। এতে শতকরা ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে শ্বেতসার, খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। ক্যালরিও অনেক এই ফলটিতে।
কলা: কলা প্রায় সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা অবশ্যই থাকা উচিত।
এম আখতারুজ্জামান আরও বলেন, মানুষ ফরমালিনের ভয়ে ফল খেতে চায় না। ফলের খোসা ফেলে দিলে ও পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এ থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সুস্থতার জন্য মৌসুমি ফল
বর্ষাকাল শুরু হলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না তেমন। এদিকে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ এখনও বিদায় নেয়নি। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত যেন! এ সময়ে একটু সচেতন না হলেই দেখা দিতে পারে নানা অসুখ-বিসুখ। কারণ আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হয়।
সে জন্য দরকার পুষ্টিকর ও উপকারী খাবার খাওয়া। গরমে শরীর ও মন শীতল রাখতে পারে এ সময়ের কিছু ফল। এগুলো পুষ্টিমানে যেমন অনন্য, তেমনই স্বাদে ভরপুর। কাগজে-কলমে গ্রীষ্ম বিদায় নিলেও গ্রীষ্মের অনেক ফল এখনও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। করোনাভাইরাসসহ যে কোনো সংক্রমণ প্রতিরোধে বাড়ানো প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এ কাজে আপনাকে সাহায্য করবে মৌসুমি ফলগুলো।
আম: আম কেবল মিষ্টি স্বাদের জন্যই নয় বরং এর পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্যের জন্যও পরিচিত। প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি-৬, সি, আয়রন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন এবং ডায়েটি ফাইবার জাতীয় স্বাস্থ্য সমৃদ্ধকারী পুষ্টিতে ভরপুর এই ফল। আমে বিশটিরও বেশি ভিটামিন এবং খনিজ থাকে, যা একে সুপারফুড হিসেবে তৈরি করতে সহায়তা করে। ৩/৪ কাপ আম আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন সি-এর ৫০ শতাংশ, ভিটামিন এ-এর ৮ শতাংশ এবং ভিটামিন বি-৬-এর ৮ শতাংশ সরবরাহ করে। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পাকা আম, আমের রস, আমের লাচ্ছির চেয়ে ভালো উপায় নেই। আম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা স্বাদের শরবত, কুলফি, আইসক্রিম ইত্যাদি।
কাঁঠাল: এ মৌসুমের আরেকটি সুস্বাদু ফলের নাম কাঁঠাল। গ্রামে কিংবা শহরে অথবা বাজারে আপনার সঙ্গে এ ফলের দেখা হবেই। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল। কাঁঠালে আছে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী ফল। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ অনেক কম। এ ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা সবচেয়ে কম। এটি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
লিচু: রসে টইটম্বুর একটি ফলের নাম লিচু। বাইরের লাল রঙের আবরণের নিচে থাকে সাদা রঙের মিষ্টি একটি মাংসালো অংশ। লিচুতে রয়েছে প্রচুর শ্বেতসার, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। লিচুতে ভালো পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। এটি পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস যা রক্তের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা সোডিয়াম স্তর বজায় রাখতে প্রয়োজনীয়। এটি রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে। স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও এতে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, তামা এবং ফোলেট জাতীয় খনিজ রয়েছে যা রক্তচাপ বজায় রাখে।
ফুটি: গরমের একটি তাজা ফল যা আপনার শরীরকে প্রচুর হাইড্রেশন দেয়। এটি কাঁচা কিংবা জুস করে খাওয়া যায়। ফুটির শরবতও এ গরমে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এটি কেবল স্বাদেই নয়, সুন্দর গঠন এবং আকর্ষণীয় গন্ধের জন্যও পরিচিত। ভিটামিন এ, ডি, বি -৬, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ডায়েটি ফাইবারের মতো পুষ্টিতে ভরপুর হল ফুটি। এটি কেবল হাইড্রেটিং নয়, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে। ফুটিতে উচ্চ ক্যারোটিনয়েডের উপস্থিতি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন সি থাকার কারণে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
জাম: মিষ্টি স্বাদের জাম খেয়ে মুখ রঙিন করার স্মৃতি প্রায় সবারই আছে। জাম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুব উপকারী। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ জাম খেলে পেট ভালো থাকে। দাঁত আর মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কালোজাম অপরিহার্য। জামে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। পেটের সমস্যা দূর করতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে জামের জুড়ি নেই।
বেল: বেল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, যা শীতল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। গরমের কারণে সৃষ্ট পেটের অসুখ এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা দূর করতে এ গ্রীষ্মকালীন ফলটি একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এ ছাড়া উডেন আপেল হিসেবে পরিচিত বেল ডায়েটরি ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা প্রাকৃতিক রেচক হিসেবে কাজ করে এবং হজমে উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ট্যানিন সারায় ক্রনিক পেট খারাপের সমস্যা। কমায় গ্যাসট্রিক। এটি অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি মাইক্রোবায়ালও বটে। বেলের শাঁস কমায় কনস্টিপেশনের আশঙ্কা।
জামরুল: জামরুল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে খনিজ পদার্থ রয়েছে কমলার তিন গুণ এবং আম, আনারস ও তরমুজের সমান। লিচু ও কুলের সমান এর ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এবং আঙুরের দ্বিগুণ। আয়রনের পরিমাণ কমলা, আঙুর, পেঁপে ও কাঁঠালের চেয়েও বেশি। ফসফরাসের পরিমাণ আপেল, আঙুর, আম ও কমলার চেয়ে বেশি। সহজলভ্য জামরুলে আছে আশ্চর্য সব ঔষধি গুণ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এর বিচি ডায়রিয়া প্রতিরোধে ওষুধের মতো কাজ করে। এ ফল হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এ ফলে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান। এটি কলস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকর, মস্তিষ্ক ও লিভার সুরক্ষায় টনিক হিসেবে কাজ করে, বাত নিরাময়ে উপকারী। শুধু তা-ই নয়, লিভার আর কিডনির বিষ দূর করে বিপাকক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতেও অব্যর্থ টোটকা এ জামরুল।
মৌসুমি ফলে সতেজ ও সুস্থ শরীর
গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের ম ম সৌরভে ভরপুর চারপাশ। যদিও শহুরে জীবনে শুধু ফলের দোকানগুলোতেই এই সুবাস পাওয়া যায়। এগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই উপকারী। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে রক্ষায় শরীরকেও প্রস্তুত করে এসব ফল। গরম থেকে রক্ষা পেতে এবং শরীর ঠিক রাখতে দেশি ফল বেশ উপকারী।
পেঁপে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপেতে আছে প্যাপাইন। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পাকা পেঁপে খুব কার্যকর। কাঁচা পেঁপে ডায়রিয়া ও জন্ডিস সারায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে জুস করে খাওয়া যায়।
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঁঠালে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এসব উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে কাঁঠাল। ডায়াবেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই।
পানিফল আরেকটি পুষ্টিকর ফল। এতে শতকরা ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে শ্বেতসার, খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। ক্যালরিও অনেক এই ফলে। কাঁচা এবং সেদ্ধ, দুভাবেই খাওয়া যায়। পানিফল পেটের রোগ নিরাময় করে। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে, দুর্বল শরীরকে বল দেয়, যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে, হাত-পা ফোলা ঠিক করে। এ ছাড়া পানিফল ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারী। এমনকি এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণও।
কলা প্রায় সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা অবশ্যই থাকা উচিত। এনার্জি বাড়াতে কলার জুড়ি নেই। তাই খুব বেশি ওজন কমে গেলে বা শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে চিকিৎসকেরা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় শক্ত রাখে। কলায় থাকে পেকটিন নামক একটি ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। বাচ্চাদের প্রথম সলিড খাওয়ানোর সময় অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান যে কী ফল দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে কলা। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। পেট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি হজমেও সাহায্য করে কলা। একটি কলায় থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার, যা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। টামিন-মিনারেলের মতো বহু গুণসমৃদ্ধ কলায় রয়েছে ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও
সব রোগের দাওয়াই মৌসুমী ফল
হাদিসে উল্লেখ আছে আল্লাহ পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ দেননি, তারা ওষুধ নেই। প্রকৃতিতেই রয়েছে সব রোগের দাওয়াই। যুগে যুগে হেমিকরা বলে আসছেন, মৌসুমী রোগের দাওয়াই রয়েছে মৌসুমী ফলেই। তাই করোনাভাইরাস কিংবা ফ্লুর মতো রোগ-বালাই দূর করতে খেতে পারেন মৌসুমী ফল।
রোগ হলে তো ওষুধ খেতেই হয়। তবে রোগ ঠেকাতে কাজে দেয় কিছু ফল। এসব ফল খুব সহজলভ্য। মৌসুমি ফলগুলো অসুখ থেকে বাঁচায়। অনেক সময় স্বস্তিও দেয়। এ রকমই মৌসুমি কিছু ফলের গুণ জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঠান্ডা-সর্দি-জ্বরের মতো ফ্লু আক্রান্ত করলে সাধারণত প্রথমদিকে ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। এর বদলে খান মৌসুমী ফল।
এখন খেতে পারেন, কাঁচা আম, লেবু, পেয়ারা কিংবা বরই। এছাড়াও এখন মিলছে কমলাও। বাজারে সম্প্রতি বিক্রি শুরু হয়েছে তরমুজ ও বাঙ্গি। শরীর চাঙ্গা রাখতে গরম থেকে বাঁচতে এই ফলগুলোর জুড়ি নেই!
তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পানি। অতিরিক্ত ঘাম এবং তৃষ্ণা দূর করতে তরমুজের রস খুবই কার্যকর। কাজের কারণে ক্লান্তি যতই আসুক তরমুজের রস খেলে অল্প সময়েই ক্লান্তি দূর হয়। তরমুজের বীজ বেটে ঠান্ডা পানিতে চিনিসহ মিশিয়ে খেলে যকৃৎ পরিষ্কার থাকে।
যারা জ্বরে ভুগছেন তারা নিয়মিত আনারস খান। সুস্বাদু ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল হলো আনারস। সর্দি-কাশিতে আনারস খেলে কাজে দেয়। কৃমি সারাতেও এটি কার্যকর।
পেঁপে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপেতে আছে প্যাপাইন। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পাকা পেঁপে খুব কার্যকর। কাঁচা পেঁপে ডায়রিয়া ও জন্ডিসে সারায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে জুস করে খাওয়া যায়।
গরমে প্রশান্তি দেয় শসা। গরমে শরীরে যে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়, তা শসার মাধ্যমে অনেকটা পূরণ করা যায়। শসা ত্বকের জন্য ভালো।
পেট ফাঁপা, পেটের সমস্যা, ঠান্ডা, সর্দি-কাশিতে লেবু খুবই উপকারী। লেবুতে আছে ভিটামিন সি। জ্বর ও মুখের ঘা দূর করতে লেবুর ভূমিকা অনন্য।
কলা প্রায় সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা অবশ্যই থাকা উচিত।
বাজার থেকে এসব ফল কিনে এনে সরাসরি খাওয়া যাবে না। কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে পরিস্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে তারপর খান।