‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূরে

0
48
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূর
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূর

 

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূর
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূর

 

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূর

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের মাধ্যমে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন রাশিয়ার প্রতাপশালী নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে হুংকার ছাড়তে দেখা গেছে তাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূরে।’

মনে থাকার কথা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ গত মাসে ইউক্রেনে ফরাসি পদাতিক বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলেছিলেন। যদিও অধিকাংশ পশ্চিমা মিত্র দ্বিমত পোষণ করেছে ম্যাক্রঁর সঙ্গে। ন্যাটো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইতালি ইতিমধ্যে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ম্যাক্রঁর আহ্বান। এমনকি কেউ কেউ এমনও বলেছেন, রাশিয়াকে খেপিয়ে তুলছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট!

রুশ বাহিনী কিয়েভ বা ওডেসার দিকে অগ্র্রসর হলে ফরাসি সেনাবাহিনীকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে—ম্যাক্রঁর এমন মন্তব্যের পরেই পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘রাশিয়াকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা চিন্তা করলে তাতে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অংশ হয়ে যাবে না। বরং এতে করে এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির পথ বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে।’

ম্যাক্রঁর আরেক মন্তব্যও উত্তাপ ছড়িয়েছে বেশ খানিকটা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভয় পেলে চলবে না। কারণ, আমরা কোনো বড় শক্তির মুখোমুখি নই। কোনো আহামরি শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছি না আমরা। বরং রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী একটি মধ্যম শক্তির দেশ।’ বাস্তবিক অর্থে, এ ধরনের কথার লড়াই সংঘাত দীর্ঘতর করে তোলে।

পুতিনের হাত ধরে পারমাণবিক সংঘাতের সূত্রপাত হোক বা না হোক, ইউরোপের জন্য অপেক্ষা করছে আরেক বিপদ! ইউরোপীয় নেতাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে ‘ডোনাল্ট ট্রাম্পের ফিরে আসার সংবাদ’। মনে করা হচ্ছে, চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভের মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজে ফিরতে পারেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় নেতাদের ধারণা, সত্যি সত্যিই যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তাহলে ইউরোপের কপালে দুঃখই আছে! নেতাদের এ ধরনের চিন্তার পেছনে অবশ্য কারণও রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ন্যাটো নিয়ে অনেক বার বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। এই সংগঠনকে ‘অপ্রচলিত, অকার্যকর’ ইত্যাদি বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। এমনকি ট্রাম্প এখনো চরম ন্যাটো-বিদ্বেষী। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণাতে ন্যাটো সম্পর্কে বিষোদগার করা বন্ধ করেননি। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, ‘ন্যাটো তহবিলে নিয়মিত অর্থ প্রদান না করা সদস্য রাষ্ট্রদের বরং রাশিয়ার আক্রমণ করাই ভালো!’

ফিরে আসা যাক ম্যাক্রঁর সাম্প্রতিক বিবৃতিতে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট সম্ভবত ইউরোপকে রক্ষায় ফ্রান্সের ভূমিকাকে বড় করে দেখাতে গিয়েই ইউক্রেনে ফরাসি সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এর মধ্য দিয়ে হয়তো-বা মিত্রদের তিনি আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে, ইউক্রেনকে জেতাতে সব ধরনের পশ্চিমা উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে ফ্রান্স। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা এক বারও বলেননি ম্যাক্রঁ। অন্যদিকে পুতিন ঠিকই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলেছেন সরাসরি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া অবশ্যই ইউক্রেন যুদ্ধে পরাজিত হবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে এ-ও বলেছেন, কোনোভাবে যদি ইউক্রেনের পরাজয় ঘটে, তাহলে ইউরোপের ঐক্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা পড়বে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে। তিনি তো ভুল কিছু বলেননি।

চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত যা লক্ষ করা গেছে তা হলো, উভয় পক্ষই থেমে থেমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া খুব সহজেই জয়লাভ করার আশায় থাকলেও তা যেমন ঘটেনি, তেমনিভাবে পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় ইউক্রেন বিজয়ের দ্বরপ্রান্তে বলে যেসব কথা শোনা যাচ্ছিল, তা-ও বাস্তবতার আলো দেখেনি।

এই যুদ্ধে বিজয়ের পাল্লা এখন রাশিয়ার দিকে ঝুলে আছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একটা বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর মনে হয়েছিল, মস্কো অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। তবে এই গণনা যে ভুল ছিল, তা আজ সবাই জানে। বরং রাশিয়ার অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো আছে বলেই শোনা যায়। সব থেকে বড় কথা, ৫ম বারের মতো ক্ষমতায় এসে পুতিনকে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী বলেই মনে হচ্ছে।

ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের অর্থ ও সামরিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান সত্ত্বেও রুশ সেনাদের দাপট থামানো যায়নি। রাশিয়াকে ধরাশায়ী করা যায়নি। বরং গুঞ্জন আছে, কোনোভাবে রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় ঘটলে তাতে ইউক্রেনের যতটা লাভ হবে, তার থেকে বেশি সুবিধা হবে পশ্চিমা বিশ্বের! পশ্চিমারা এ কারণেই পুতিনকে পরাজিত করতে মরিয়া ভাব দেখায়।

ঠিক এমন একটি প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে ফরাসি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। এই অবস্থায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রশ্নে পশ্চিমারা নতুন করে অস্ত্র ও সেনা সরবরাহ করলে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে নিশ্চিতভাবে। আর একেই ‘তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ’ হিসেবে অবিহিত করেছেন পুতিন।

এ কথাও সত্য যে, রুশ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট আশার কথাও শুনিয়েছেন। দুই প্রেসিডেন্টের কথার লড়াইয়ের মধ্যে শান্তির সম্ভাবনাও উঁকি মারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—ম্যাক্রঁ বলেছেন, প্যারিসে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় পুতিনকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাবেন তিনি। রাশিয়াকে সংঘাতের পথ এড়িয়ে চলার অনুরোধ করবেন।

মজার ব্যাপার হলো, পুতিন একটা সময়ে বেশ ঘন ঘনই ‘শান্তির কথা’ বলতেন। তবে বিশেষত ইউক্রেন যুদ্ধের পর তিনি বেশি মাত্রায় আগ্রাসি ও সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠেছেন। মাঝেমধ্যেই পারমাণবিক যুদ্ধের হুংকার দেন। এই অর্থে, পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা গরম নিঃশ্বাস ফেলছে বিশ্বের ঘাড়ে। তাছাড়া বারংবার ‘পারমাণবিক’ শব্দের উচ্চারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করে তুলছে—সেটাই স্বাভাবিক।

মনে রাখতে হবে, ভেতরে ভেতরে আরেক ঘটনা ঘটে গেছে! আফ্রিকায় রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এই অঞ্চলে ফ্রান্সের প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। মূলত এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করে আসছে প্যারিস। এই কাজে ফ্রান্সকে বেশ ঘাম ঝরাতে হচ্ছে বটে, তবে এতে বেশ কাজও হচ্ছে! রাশিয়ার সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষ বাধতে পারে—ইউরোপীয় নেতাদের এমন কথা বোঝাতে পেরেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ইউরোপীয় সরকারগুলো যে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুংকারে ভয় পাচ্ছে না, এ কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে? অবশ্যই না। তবে হুট করেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পথে হাঁটবেন না পুতিন, এটা একপ্রকার নিশ্চিত। অন্তত আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত পারমাণবিক রিমোট পকেটেই রাখবেন রুশ স্বৈরশাসক।

যুদ্ধের এক নতুন যুগে বিশ্ব

একসময় শুধু সামরিক পরাশক্তিধর দেশগুলোর হাতেই যুদ্ধ ড্রোন ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন ছোট ছোট দেশ থেকে শুরু করে বিদ্রোহী, সশস্ত্রগোষ্ঠী, এমনকি জঙ্গিদের হাতেও এসব ড্রোন চলে গেছে। ফলে যুদ্ধের প্রকৃতিও বদলে গেছে। এ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন বিবিসির সাবেক প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস।

সামরিক ইতিহাসে কখনো কখনো একটি একক অস্ত্রব্যবস্থা যুদ্ধের পুরো যুগের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, মধ্যযুগে এগিনকোর্ট যুদ্ধে ইংরেজ তিরন্দাজদের ব্যবহৃত লংবো বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারী সাঁজোয়া ট্যাংকগুলো ছিল স্থলযুদ্ধের প্রতীক।

আফগানিস্তান, ইরাক ও অন্যত্র যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ‘আইকনিক’ অস্ত্র হয়ে ওঠে মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) এমকিউ-১ প্রিডেটর। যাকে চলতি কথায় ড্রোন বলা হয়।

স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মনুষ্যবিহীন এই আকাশযান থাকায় দেশটি যুদ্ধের ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও আধিপত্যশীল পরাশক্তি হয়ে ওঠে।

শুরুতে গোয়েন্দা নজরদারির কথা ভেবে এই ড্রোন তৈরি করা হয়। কিন্তু এই ড্রোনে যখন হেলফায়ার নামের ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করা হয়, তখন তার প্রতীকী মর্যাদা বেড়ে যায়।

এমকিউ-১-এর উত্তরসূরি হলো দ্য রিপার। একে ‘হান্টার-কিলার’ও বলা হয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার লক্ষ্যেই এটি তৈরি। এটি প্রিডেটরের চেয়ে অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে

পারে। এটি অধিক গোলাবারুদ বহনে সক্ষম। নাম থেকেই এই ড্রোনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়।

ওয়াশিংটনের শত্রুদের লক্ষ্য করে যখন–যেখানে হামলার নির্দেশ পাবে, সেখানেই হামলা চালাতে পারে এসব ড্রোন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যায় রিপার ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইসরায়েলের কাছে এ ধরনের ড্রোন থাকার আলামত মেলে। তাই তারা এমন অভিযান চালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এটাই যুদ্ধের ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহারের প্রথম যুগ। তবে এই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। এখন অনেকের হাতেই যুদ্ধ ড্রোন চলে এসেছে।

যুদ্ধ ড্রোন ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যে অনেক ‘খেলোয়াড়’ নাম লিখিয়েছেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ বা বিদ্রোহী দমনের লড়াইয়ের বাইরে এখন পূর্ণমাত্রার প্রথাগত যুদ্ধেও এসব ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজনের ফলে বিশ্ব এখন তৃতীয় যুগের ড্রোন যুদ্ধের অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।

দ্য হান্টার কিলার-এমকিউ-৯ রিপার

*এমকিউ-৯ রিপারের সামনের ডগায় রয়েছে নাকের আদলে তৈরি ক্যামেরা। নিচের একটি ইউনিটেও ক্যামেরা ও সেন্সর আছে।

*অধিকতর স্থিতিশীলতার জন্য রয়েছে ‘ভি’ আকৃতির লেজ।

*অস্ত্র জিপিএসনির্ভর। কিংবা ড্রোনে আছে লেজার গাইডেড মিসাইল ও বোমা ব্যবহারের সুবিধা।

*দৈর্ঘ্য: ১০ দশমিক ৯৭ মিটার (৩৬ ফুট)।

*উচ্চতা: ৩ দশমিক ৬৬ মিটার (১২ ফুট)।

*পাখার বিস্তার: ২১ দশমিক ১২ মিটার (৬৯ ফুট ৩ ইঞ্চি)।

*সর্বোচ্চ গতি: ঘণ্টায় ৪৬৩ কিলোমিটার বা ২৮৭ মাইল।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ড্রোন হামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন ইথিওপিয়ায় তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) বিদ্রোহীদের হামলার মুখে দেশটির সরকারের অবস্থান সংহত করার কাজে ড্রোন হামলা প্রধান একটি অস্ত্র হয়ে ওঠে।

তুরস্ক ও ইরানের কাছ থেকে সশস্ত্র ড্রোন কিনেছে ইথিওপিয়ার সরকার। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে চীনের উইং লুং-২ ড্রোনও দেশটির সরকার পেয়েছে বলে শোনা যায়।

লিবিয়ায় যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে, সেখানে নিজেদের মিত্র হিসেবে পরিচিত বিদ্রোহী নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারকে একইভাবে চীনের তৈরি ড্রোন সরবরাহ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

অনেক ক্ষেত্রেই সশস্ত্র ড্রোনের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। যেমন ত্রিপোলিভিত্তিক লিবিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে ড্রোন।

আবার গত বছর নাগোরনো-কারাবাখ সংঘাতের সময় তুরস্কের সরবরাহ করা ড্রোন আজারবাইজানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্মেনিয়ার কাছ থেকে বিতর্কিত ছিটমহলের নিয়ন্ত্রণ নিতে আজারবাইজানের পক্ষে নির্ণায়ক ভূমিকা রাখে ড্রোন।

তবে ড্রোন হামলা প্রায়ই জটিল আইনি ও নৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ ড্রোনের ব্যবহার কোনোভাবে রোধ করা যায় কি না, এমন আশা ইতিমধ্যে অলীক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছাড়া অন্য কারও কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এসব ড্রোন রপ্তানি করতে অনিচ্ছুক। তবে অন্যরা এ ধরনের কোনো ভেদাভেদ করে না। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ, সংঘাত, লড়াই কিংবা স্রেফ নজরদারির জন্য মনুষ্যবিহীন এসব আকাশযান বিভিন্ন পক্ষের হাতে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে।

বিশ্বের শতাধিক দেশ ও অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীর হাতে এখন ড্রোন রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক পক্ষ সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করে।

নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির গবেষণা বিভাগের পরিচালক পল শ্যারে বলেন, ড্রোনের এমন বিস্তার অব্যাহত থাকবে বলে প্রতীয়মান হয়।

পল শ্যারে আরও বলেন, ‘বিশ্বে চীন এখন পর্যন্ত সশস্ত্র ড্রোনের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক। কিন্তু এই ড্রোন শুধু নেতৃস্থানীয় সামরিক শক্তিধর দেশের কাছেই সহজলভ্য নয়। ইরান ও তুরস্কের মতো মাঝারি শক্তিধর দেশগুলোর কাছেও ড্রোন প্রযুক্তি আছে। তারা দেশের বাইরে এই প্রযুক্তি বিক্রি করছে।’

পল শ্যারে বলেন, বাণিজ্যিক ড্রোন প্রযুক্তি এতটাই সহজলভ্য যে কেউ চাইলেই কয়েক শ ডলার খরচ করে হামলা চালানোর ড্রোন তৈরি করতে পারে। কিছু সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর এমন ড্রোন আছে।

মনুষ্যবিহীন আকাশযানের (ইউএভি) সুস্পষ্ট প্রভাব নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে পল শ্যারে বলেন, এটি (ড্রোন) একটি দেশকে সস্তায় একটি ‘বিমানবাহিনী’দেয়।

পল শ্যারে বলেন, যেসব দেশ ও অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্রগোষ্ঠীর যুদ্ধবিমান কেনার সামর্থ্য নেই, তারা ড্রোন কিনতে পারে। যদিও ড্রোন যুদ্ধবিমানের মতো অতটা সক্ষমতাসম্পন্ন নয়, কিন্তু তার মাধ্যমে এসব পক্ষ আকাশে কিছুটা হলেও নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলতে পারছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এই ড্রোনের মাধ্যমে বড় ধরনের নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো যাচ্ছে। স্থলবাহিনীর জন্য এসব ড্রোন অত্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে।

পল শ্যারে বলেন, ‘এখন যেসব ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো প্রচলিত যুদ্ধবিমানের তুলনায় ছোট। এগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে। ড্রোনগুলো ধীরে ও নিচ দিয়ে চলে। তাই অনেক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এগুলো ভূপাতিত করার সক্ষমতা রাখে না।’

সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির গবেষণা বিভাগের পরিচালক সতর্ক করে বলেন, এই ড্রোন যুদ্ধের রূপান্তরে নাটকীয় প্রভাব ফেলতে পারে।

যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই

যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই
যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই

যুদ্ধ ও শান্তি মানুষের জীবনের দুটি বিপরীতমুখী অভিজ্ঞতা। যুদ্ধের বিভীষিকা যেখানে মানুষের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়, সেখানে শান্তি মানুষের জীবনকে সুরক্ষা, সমৃদ্ধি, এবং স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যায়। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, যেখানে নানা ধরণের যুদ্ধ ও সংঘাত চলছে, আমরা সকলে শান্তির মূল্য ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

যুদ্ধের ভয়াবহতা

যুদ্ধ মানুষের জীবনে আনে চরম ধ্বংস। এটি শুধুমাত্র মানুষের জীবন কেড়ে নেয় না, বরং এটি সমাজের অবকাঠামো, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিকেও ধ্বংস করে। যুদ্ধের ফলে অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়, এবং সামাজিক ও মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়। যুদ্ধের পরিণতিতে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি হয়, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়ে ইউরোপ এবং এশিয়ার অনেক দেশ বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের মুখে পড়েছিল, যার প্রভাব এখনও অনুভূত হয়।

শান্তির প্রয়োজনীয়তা

শান্তি মানুষের জীবনে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনে। এটি সমাজে সমতা, ন্যায়বিচার, এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। শান্তিপূর্ণ সমাজে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। মানুষ নিজের মেধা ও সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে। শান্তি মানেই শুধু যুদ্ধের অনুপস্থিতি নয়, বরং এটি একটি ইতিবাচক অবস্থান যেখানে মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং সামগ্রিক সুস্থতা বিদ্যমান।

শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায়

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সংলাপ, এবং কূটনীতি অপরিহার্য। বিশ্বের বড় বড় সংঘাতগুলো প্রায়শই বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতপার্থক্য এবং ভুল বোঝাবুঝির ফল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করা জরুরি। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এ ধরনের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক বিনিময়, এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তির ভিত্তি গড়ে তোলা যায়।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালন গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যক্তি যদি তাদের নিজের পরিবার, সমাজ, এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করে, তবে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার, এবং সামাজিক সংগঠনগুলো শান্তির মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে পারে এবং মানুষকে সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক আচরণের দিকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

উপসংহার

যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সবার আগে প্রয়োজন শান্তির মূল্যবোধকে গ্রহণ করা। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি আরও সমস্যার সৃষ্টি করে। শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি। এজন্য আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে এবং শান্তির জন্য সংগ্রাম করতে হবে। যুদ্ধে নয়, শান্তিতে আমাদের ভবিষ্যত।

marriage bureau

islamic marriage media

islamic marriage sites

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here