ইসলামে বিয়ের নিয়ম ও বিধান-শর্ত
বিয়ে আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত ও রাসুল (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। চারিত্রিক অবক্ষয় রোধের অনুপম হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানবিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ। বিয়ে ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— তিনি তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ’ (সুরা রুম, আয়াত :২১)
ইসলামে বিয়ের যাবতীয় নিয়ম-কানুন এবং বিধান-শর্ত ও আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
ইসলামে বিয়ের রুকন বা মৌলিক ভিত্তি
এক. বর-কনে উভয়ে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া।
দুই. ইজাব বা প্রস্তাবনা: এটি হচ্ছে বরের কাছে মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থান করা। যেমন, ‘আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম’ অথবা এ ধরনের অন্য কোনভাবে প্রস্তাব পেশ করা।
তিন: কবুল বা গ্রহণ করা: এটি বর বা তার প্রতিনিধির সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন, ‘আমি কবুল বা গ্রহণ করলাম’ ইত্যাদি।
বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
(১) বর-কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া।
(২) বর-কনে একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বামীহারা নারী (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)-কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জার দরুন) থাকাটাই তার সম্মতি। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৪১)
(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। ’ (সুরা নুর, ২৪:৩২)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১০২১)
(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। ’ (সহিহ জামে, হাদিস নং : ৭৫৫৮)
সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)
বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ১০৭২)
কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত
১. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া।
২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।
৪.অভিভাবক কনের ধর্মানুসারী হওয়া। সুতরাং কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
৫. ন্যায়পরায়ণ হওয়া। অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক ‘আদালত’কে (ধর্মভীরুতা) যথেষ্ট বলেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকলেও চলবে।
৬.পুরুষ হওয়া। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘এক নারী অন্য নারীকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা নারী নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৭৮২; সহিহ জামে : ৭২৯৮)
৭. বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের ‘কুফু’ বা সমতা ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতাবান হওয়া।
ফিকাহবিদরা অভিভাবকদের ধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে
কিভাবে বিয়ে করব
সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া (আ.)-কে তাঁর জীবনসাথিরূপে সৃষ্টি করেন এবং তাঁদের বিয়ের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।
এমনকি অনন্ত অনাবিল সুখের জান্নাতেও নারী-পুরুষ পরস্পরের সঙ্গবিহীন অতৃপ্ত থাকবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
মানুষের স্বভাবজাত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য, চারিত্রিক উৎকর্ষ ও পবিত্রতা রক্ষার অন্যতম উপায় বিয়ে।
মানবতার ধর্ম ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পূতপবিত্র জীবনযাপনের জন্য বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একজন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩)
বিয়ের ফজিলত
হজরত আয়েশা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো।
কেননা আমি উম্মতের সংখ্যা নিয়ে হাশরের মাঠে গর্ব করব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৪৬)
আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, চারটি জিনিস নবী (সা.)-এর সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত—লজ্জা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মিসওয়াক করা ও বিয়ে করা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮০)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই পুরুষ মিসকিন! মিসকিন!! মিসকিন!!! যার কোনো স্ত্রী নেই, যদিও সে ধনবান হয়। আর ওই নারী মিসকিন! মিসকিন!! মিসকিন!!! যার কোনো স্বামী নেই, যদিও সে সম্পদের মালিক হয়।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৬৫৮৯)
বিয়ের উপকারিতা
বিবাহ হলো নারী-পুরুষের মধ্যে একটি সামাজিক, ধর্মীয়, ও আইনি বন্ধন। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি যা দুজন মানুষের মধ্যে প্রেম, শ্রদ্ধা, ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বিবাহের অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ও সামাজিক স্তরে বিস্তৃত।
ব্যক্তিগত স্তরে বিয়ের উপকারিতা
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি:বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে অবিবাহিতদের তুলনায় মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার হার বেশি থাকে। বিবাহিত ব্যক্তিরা সাধারণত কম চাপ অনুভব করেন, কম হতাশাগ্রস্ত হন, ও বেশি সুখী হন। এছাড়াও, বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে।
- জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা:বিবাহিত ব্যক্তিরা সাধারণত অবিবাহিতদের তুলনায় জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে বেশি সফল হন। বিবাহ একজন ব্যক্তিকে তার জীবনে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রদান করে, যা তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে।
- ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও পরিপূর্ণতা:বিবাহ একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও পরিপূর্ণতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবাহ একজন ব্যক্তিকে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল, সহযোগিতামূলক, ও দায়িত্বশীল হতে শেখায়। এছাড়াও, বিবাহ একজন ব্যক্তির সামাজিক দক্ষতা ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
পারিবারিক স্তরে বিয়ের উপকারিতা
- পরিবার ও সমাজের স্থিতিশীলতা:বিবাহ একটি পরিবারের ভিত্তি। বিবাহিত দম্পতিরা তাদের সন্তানদের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করতে পারে, যা পরিবার ও সমাজের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
- সন্তানের সুস্থ বিকাশ ও লালন-পালন:বিবাহিত দম্পতিরা তাদের সন্তানদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বিকাশ ও লালন-পালন করতে পারে। বিবাহিত পিতামাতারা তাদের সন্তানদের জন্য একজন আদর্শ মডেল হতে পারেন, যা সন্তানদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে।
- বয়স্কদের যত্ন ও সহায়তা:বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরের যত্ন ও সহায়তা করতে পারেন, বিশেষ করে বয়স্ক বয়সে। বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরের জন্য একজন সঙ্গী, একজন বন্ধু, ও একজন সহায়ক হতে পারেন।
সামাজিক স্তরে বিয়ের উপকারিতা
- সমাজের উন্নয়নে অবদান:বিবাহিত দম্পতিরা সমাজকে বিভিন্নভাবে অবদান রাখতে পারেন। তারা তাদের সন্তানদের মাধ্যমে সমাজকে একটি সুন্দর ও উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে পারেন। এছাড়াও, বিবাহিত দম্পতিরা তাদের কর্মজীবন ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজকে বিভিন্নভাবে সেবা করতে পারেন।
- অপরাধ ও সামাজিক সমস্যা হ্রাস:বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে অবিবাহিতদের তুলনায় অপরাধ ও সামাজিক সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে। বিবাহ একজন ব্যক্তিকে তার জীবনে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রদান করে, যা তাকে অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।
- সামাজিক বন্ধন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি:বিবাহ একটি সামাজিক বন্ধন। বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরের সাথে সহযোগিতা করে সামাজিক বন্ধন ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
উপসংহার
বিয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ও সামাজিক স্তরে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। বিবাহ একটি সুন্দর ও মঙ্গলজনক প্রতিষ্ঠান, যা মানুষের জীবনকে অর্থবহ ও পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
পাত্র-পাত্রীর মধ্যে লক্ষণীয় গুণাবলি।
পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সুখ-শান্তি এবং বৈয়ারের একটি সম্পর্ক এমন একটি রহস্যময় এবং সুখদ যোগ। এই সম্পর্কে বিশেষ গুণাবলি রয়েছে যা তাদের যোগাযোগ এবং বৈয়ারের মধ্যে এক সময় দ্বারা পরিচিত হয়েছে। পাত্র-পাত্রী মধ্যে সম্পর্কটি প্রেম, সম্মেলন, সহযোগিতা, বিশ্রাম এবং পুনরায় তৈরি করতে সহায়ক। এই সম্পর্কে অবস্থান করা সহজ হতে পারে, তবে এটি ব্যক্তিগতভাবে এবং সাহায্য এবং সাপোর্টের সাথে সহজেই হারাতে পারে। পাত্র-পাত্রী মধ্যে সুখ-শান্তি বাড়াতে এবং এক অপরের সাথে একটি সার্থক সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যাকুল হতে হবে।
১. প্রেম এবং আদর:
পাত্র-পাত্রী মধ্যে প্রেম এবং আদর হলো সুখের এবং সান্ত্বনা ভরা মৌল্য। এই বৃহত্তর ভাবে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে প্রয়োজন। এটি দুটি ব্যক্তির মধ্যে ভালোবাসা এবং ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং একে অপরকে সমর্থন এবং সান্ত্বনা প্রদান করে।
২. সম্মেলন এবং সংলগ্নতা:
একটি সুস্থ পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে সম্মেলন এবং সংলগ্নতা গুরুত্বপূর্ণ। তারা এক অপরের সাথে যোগাযোগ করতে এবং একটি সামর্থ্যশীল সম্পর্ক তৈরি করতে সমর্থ। পাত্র-পাত্রী মধ্যে সংলগ্নতা মৌল্যবান এবং একটি দুর্বলতা বা ত্রুটির সময়কালে একে অপরকে সাহায্য এবং সমর্থন প্রদান করতে সাহায্য করে।
৩. সহযোগিতা এবং সমর্থন:
একটি সুস্থ পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে সহযোগিতা এবং সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। তারা একটি অন্যকে উৎসাহিত এবং সাহায্য করতে ভালোবাসে। এই গুণাবলিটি সমপর্কটি দৃঢ় এবং সামর্থ
সাবালক কনের অনুমতি নেওয়া অপরিহার্য
ইসলামে নারীদেরও পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিয়ে তাদের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ জন্যই সাবালক মেয়ের বাবাও যদি তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেন, তবে তা শুদ্ধ হবে না। তাই মেয়েকে পাত্রের সার্বিক অবস্থা জানানো এবং বিয়ে বিষয়ে পরিষ্কার মতামত নেওয়া আবশ্যক। সব কিছু জানানোর পর সে মুখে সম্মতি প্রকাশ করলে ভালো, অন্যথায় কুমারী মেয়ের অনুমতি গ্রহণকারী অভিভাবক হলে তার চুপ থাকাও অনুমতি বলে বিবেচিত হবে। পক্ষান্তরে মেয়ে আগে বিবাহিত হলে মৌখিক অনুমতি নেওয়া জরুরি। (আল বাহরুর রায়েক : ৩/১১১)
বিয়ের সুন্নতসম্মত পদ্ধতি
ছেলে-মেয়ে উভয় পক্ষের পরামর্শক্রমে শরিয়তবিরোধী কুপ্রথামুক্ত বিয়ের আয়োজন করা আবশ্যক, যাতে কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকবে এবং বিয়ে পরিচালনাকারী খোতবা পাঠের পর উভয় ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুলের (গ্রহণ) আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। উভয় পক্ষের সামর্থ্য ও সম্মান অনুপাতে মোহর ধার্য করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। বিয়ের আকদ মসজিদে করা সুন্নত। আকদের পর উপস্থিত মানুষের ভেতর কিছু খেজুর বিতরণ করা উত্তম। এরপর কনেকে বরের হাতে সমর্পণ করবে। বাসরযাপনের পর বরপক্ষ সামর্থ্য অনুযায়ী ওলিমা করবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৮-২১)
মজলিসে খেজুর বিতরণের পদ্ধতি
বিয়ে আকদের পর খেজুর নিক্ষেপ করা সুন্নত। তবে মসজিদে বিয়ে হলে মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে এবং অন্যান্য পরিবেশেও মজলিসের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে খেজুর নিক্ষেপ না করে বিতরণ করা উচিত। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ৪/২২, আসসুনানুল কুবরা, হাদিস : ১৪৬৮৪, তালখিসুল হাবির : ৩/৪২৪, এলাউস সুনান : ১১/১১)
স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ ও জামাতে নামাজ আদায়
বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে হাত রেখে এই দোয়া পড়া সুন্নত—
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা জাবালতাহা আলাইহি। ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালবাহা আলাইহে।
একটি হাদিসে স্বামী-স্ত্রী জামাতে নামাজ পড়ে দোয়া করার নির্দেশও পাওয়া যায়। এই দোয়া করবে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পরিবারে বরকত দিন, স্ত্রী থেকে আমাকে উপকৃত করুন এবং আমার থেকে তাকে উপকৃত করুন, যত দিন ভালো হয় আমাদের একসঙ্গে রাখুন এবং যেদিন চিরতরে একে অপর থেকে আলাদা হওয়া ভালো হয় সেদিন আলাদা করুন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৬০, আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৪০১৮)
স্বামী-স্ত্রী জামাতে নামাজ পড়লে স্বামী ইমামতি করবে এবং স্ত্রী তার এক কদম পেছনে দাঁড়াবে। নতুবা নামাজ শুদ্ধ হবে না।
স্ত্রীর মন প্রফুল্ল করার চেষ্টা করবে
স্বামী প্রথম সাক্ষাতে স্ত্রীর সঙ্গে এমন কাজ করবে যেন তার মন প্রফুল্ল হয়। যেমন—তাকে দুধ বা শরবত পান করানো ইত্যাদি। হাদিস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় একটি দুধের পেয়ালা থেকে নিজে কিছু পান করলেন, অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে পান করানোর জন্য পেয়ালা এগিয়ে দিলে তিনি লজ্জায় মস্তকাবনত করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৭৫৯১)
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনীয়তা রক্ষা করবে
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে সংঘটিত লজ্জাজনক কথাবার্তা ও কাজকর্ম বন্ধুবান্ধবের সামনে প্রকাশ করা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং তার স্ত্রী তার সঙ্গে মিলিত হয়, অতঃপর তার গোপনীয়তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৩৭)