মানুষের এত চাওয়া পাওয়া কেন?2024

0
30
মানুষের
মানুষের

মানুষের এত চাওয়া পাওয়া কেন?2024

মানুষের চাওয়া-পাওয়া বা ইচ্ছা একটি অত্যন্ত জটিল এবং বহুস্তরীয় বিষয়।  জীবনের এই চাওয়া-পাওয়ার প্রকৃতি, কারণ এবং তা নিয়ে চিন্তা অনেকটাই দার্শনিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক অবস্থান থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।  চাওয়া-পাওয়ার ভিত্তি সাধারণত তার প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, এবং সমাজের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত। তবে, এটি একে একে ব্যাখ্যা করা গেলে দেখা যাবে যে, মানব চাওয়া-পাওয়া মূলত কিছু মৌলিক মানসিক ও শারীরিক চাহিদার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত, যা প্রতিটি মানুষ নিজের জীবনকে অর্থপূর্ণ, সুখী, এবং নিরাপদ মনে করার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াটি সবসময় সহজ বা সরল নয়, বরং প্রতিটি  জীবনে এই চাওয়া-পাওয়ার তত্ত্ব নানা ধরনের ভিন্নতা সৃষ্টি করে।

১. মানুষের মৌলিক চাহিদা

জীবনের চাওয়া-পাওয়ার প্রাথমিক উৎস তার মৌলিক শারীরিক ও মানসিক চাহিদাগুলি। আব্রাহাম মাসলো (Abraham Maslow) তাঁর “হায়ারার্কি অফ নিডস” তত্ত্বে চিহ্নিত করেছেন যে, চাহিদাগুলি স্তরে স্তরে বিভক্ত এবং এসব চাহিদার পূর্ণতা পেতে মানুষ সচেষ্ট থাকে। তিনি পাঁচটি স্তরের চাহিদা উল্লেখ করেছেন:

শারীরিক চাহিদা (Physiological Needs): খাদ্য, পানি, শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘুম ইত্যাদি জীবনের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যকীয় চাহিদাগুলি।
নিরাপত্তা চাহিদা (Safety Needs): শারীরিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ইত্যাদি।
আবেগিক চাহিদা (Love and Belonging): সম্পর্ক, বন্ধু, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি।
আত্মসম্মান চাহিদা (Esteem Needs): আত্মবিশ্বাস, সম্মান, স্বীকৃতি, সফলতা ইত্যাদি।
আত্মবিকাশ চাহিদা (Self-Actualization): নিজের পূর্ণ সম্ভাবনার প্রতি আগ্রহ, সৃজনশীলতা, আত্মবিশ্লেষণ ইত্যাদি।
মাসলো এর এই তত্ত্ব থেকে বোঝা যায় যে, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি পূর্ণ হওয়ার পর তার চাওয়া-পাওয়ার প্রকৃতি আরও গভীর ও জটিল হয়ে ওঠে। এই চাহিদাগুলি যদি পূর্ণ না হয়, তবে মানুষ একধরনের অশান্তি অনুভব করে, যার ফলে তার চাওয়ার প্রকৃতি বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, খাবার বা নিরাপত্তা প্রাপ্তির পরে মানুষ নিজের আত্মসম্মান বা সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য নতুন নতুন চাহিদা তৈরি করে।

২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

জীবনের চাওয়া-পাওয়া কেবল তার মৌলিক চাহিদার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। মানুষ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এবং সামাজিক প্রাণী হিসেবে নিজের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে চায়। অতএব, সামাজিক পরিচিতি, অর্থনৈতিক অবস্থান, এবং সমাজের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাপ ও প্রভাবের কারণে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার পরিধি বাড়ে।

আজকের বিশ্বে, বিশেষত আধুনিক সমাজে, সামাজিক চাহিদাগুলি জীবনের চাওয়া-পাওয়ার অন্যতম প্রধান উৎস। প্রাচীন যুগে, মানুষ নিজের চাহিদা পূরণের জন্য তেমন বেশি কিছু ভাবত না, তবে আধুনিক যুগে সামাজিক মিডিয়া, টেলিভিশন, সিনেমা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের জীবনে এক নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। “যতটুকু দরকার, ততটুকু” এই চিন্তা আজকাল প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। মানুষ একে অপরের জীবনকে অনুকরণ করতে চায়, যার কারণে তার চাওয়া-পাওয়ার আকার বিস্তৃত হয়ে ওঠে।

৩. অর্থের প্রতি লোভ

অর্থ মানুষের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি মূলত নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা এবং সুখের অনুভূতি অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যক। অর্থের প্রতি মানুষের আকর্ষণ এমন এক শক্তিশালী প্রভাব যা তাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চাহিদা তৈরি করতে প্রলুব্ধ করে। আজকের আধুনিক বিশ্বে, অর্থই সবকিছু হওয়ার মত ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অর্থের মাধ্যমে মানুষ তার আরামদায়ক জীবনযাপন, পরিপূর্ণ সামাজিক অবস্থান এবং মর্যাদা অর্জন করতে পারে। তাছাড়া, অর্থের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ভ্রমণ এবং অন্যান্য সুবিধা লাভের সুযোগও বৃদ্ধি পায়। এই কারণে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রকৃতিতে অর্থ একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে।

৪. আত্মপরিচয় এবং অহংকার

জীবনের চাওয়া-পাওয়া একটি বড় অংশ আসে তার আত্মপরিচয় ও অহংকারের থেকেও।  নিজের অস্তিত্ব এবং স্বকীয়তা অনুভব করতে চায়, এবং সে এই চাহিদা পূরণের জন্য সামাজিক সম্মান, সফলতা এবং শক্তির দিকে এগিয়ে যায়। সাধারণত, মানুষ সমাজে তার স্থান এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে, যা তার চাওয়া-পাওয়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আত্মসম্মান অর্জন, সফলতা কামনা, এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার তাড়না মানুষের চাওয়ার সাথে গভীরভাবে যুক্ত।

এছাড়া, অধিকাংশ মানুষেরই এক ধরনের মানসিক প্রবণতা থাকে যা তাকে আরও কিছু অর্জন করার প্ররোচনা দেয়। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে যখন মানুষ নিজের প্রয়োজনীয়তা মেটায়, তখন সে আরও কিছু পেতে চায়, যা তাকে আরও বেশি সফল এবং মান্যযোগ্য করে তোলে। এর ফলে তার চাওয়া-পাওয়ার পরিধি আরও বিস্তৃত হয়।

৫. নিরন্তর তাড়া: সুখের সন্ধানে

অধিকাংশ জীবনের চাওয়া-পাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হল সুখ অর্জন। মানুষ জীবনের বিভিন্ন সময়ে সুখের জন্য নানা কিছু চায়—যেমন, ভাল সম্পর্ক, ভালো চাকরি, নিরাপদ ভবিষ্যৎ, শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি। কিন্তু, অনেক সময় দেখা যায় যে, মানুষের চাওয়া পূর্ণ হলে তারা আবার নতুন কিছু চায়, কারণ চাওয়ার অন্ত নেই। একধরনের নিরন্তর তাড়া মানুষের মধ্যে সক্রিয় থাকে যা তাকে আরও নতুন কিছু অর্জনের দিকে পরিচালিত করে।

এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা, যেখানে মানুষের মনে একটি অভ্যন্তরীণ খালি জায়গা থাকে, যেটি একমাত্র “সুখ” দ্বারা পূর্ণ হতে পারে। তবে, যখন মানুষ নির্দিষ্ট কিছু পায়, তখন তা সাময়িক আনন্দ দেয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী শান্তি বা সুখ আসতে থাকে না। এই কারণে মানুষের চাওয়া-পাওয়া এক নিঃশেষ অভ্যন্তরীণ খালি

মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কী?

ইসলামে সঠিক বয়সে বিয়ে:
ইসলামে সঠিক বয়সে বিয়ে:

জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ নির্ধারণ করা একদম সহজ নয়। কারণ, মানুষের মূল্যবোধ, জীবনদর্শন এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে এই উত্তরের ভিন্নতা হতে পারে। তবে, সাধারণভাবে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনা করা যেতে পারে:

১. সময়:

সীমিততা: সময় হল একমাত্র এমন সম্পদ যা সবার কাছে সমানভাবে বণটিত হয়েছে, কিন্তু একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না।
অনন্যতা: প্রত্যেক মুহূর্তই অনন্য এবং তা আর কখনো ফিরে আসবে না।
মূল্যবান ব্যবহার: সময়কে কীভাবে ব্যবহার করা হয়, তা নির্ধারণ করে আমাদের জীবনের মান।
অপচয়: সময় অপচয় করা মানে জীবনের অমূল্য সম্পদ নষ্ট করা।

২. স্বাস্থ্য:

জীবনের ভিত্তি: স্বাস্থ্য ছাড়া অন্য কোন সম্পদই আসল অর্থে উপভোগ করা যায় না।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য: দুইটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ জীবন: সুস্থ থাকলেই আমরা জীবনের সব সুযোগ উপভোগ করতে পারি।

৩. সম্পর্ক:

জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ: পরিবার, বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা জীবনকে সুখী করে।
প্রেম, ভালোবাসা: এগুলো জীবনের মূল শক্তি।
সমর্থন: কঠিন সময়ে সম্পর্কগুলো আমাদের শক্তি জোগায়।
৪. জ্ঞান:

বিকাশের চাবিকাঠি: জ্ঞান অর্জন করে আমরা নিজেদেরকে উন্নত করতে পারি।
সমস্যা সমাধান: জ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারি।
স্বাধীনতা: জ্ঞান মানুষকে স্বাধীন করে তোলে।

৫. অভিজ্ঞতা:

জীবনের ধন: নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমরা জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারি।
বৃদ্ধি: অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে আরো বৃদ্ধি করতে পারি।
স্মৃতি: অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি সৃষ্টি করে।

৬. স্বাধীনতা:

নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া: স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের পথ চলা: নিজের পছন্দের কাজ করার স্বাধীনতা মানুষকে সুখী করে।
সম্মান: স্বাধীনতা মানুষকে সম্মান দেয়।

৭. আত্মবিশ্বাস:

সফলতার চাবিকাঠি: আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া সম্ভব নয়।
সমস্যা মোকাবিলা: আত্মবিশ্বাসী মানুষ কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে ভয় পায় না।
সুখী জীবন: আত্মবিশ্বাসী মানুষ সাধারণত সুখী থাকে।

৮. শান্তি:

মানসিক স্বাস্থ্য: শান্তি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।
সুস্থ সম্পর্ক: শান্তি সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
সৃষ্টিশীলতা: শান্তি মানুষকে সৃষ্টিশীল করে তোলে।

উপসংহার:

জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ নির্ধারণ করা সত্যিই কঠিন। কারণ, মানুষের মূল্যবোধ, জীবনদর্শন এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে এই উত্তরের ভিন্নতা হতে পারে। তবে, সাধারণভাবে উপরে উল্লেখিত সমস্ত বিষয়ই মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনকে আরো সুখী ও সার্থক করতে পারি।

 

 

আপনারত কাছে নিজের মান বাড়ানোর উপায়:

নিজের মান বা মর্যাদা (self-worth) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে। আপনি যে পরিস্থিতিতেই থাকুন না কেন, নিজের আত্মমর্যাদা উন্নত করা আপনার জীবনকে আরো সুন্দর ও সফল করতে সাহায্য করবে। তবে, এই মান বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট উপায় রয়েছে, যা অনুসরণ করলে আপনি নিজেকে আরো সম্মানিত এবং পূর্ণতা লাভ করতে পারবেন। এই প্রবন্ধে, আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কিভাবে নিজের মান বাড়ানো যায়।

১. আত্মবিশ্বাস গঠন করুন

নিজের উপর বিশ্বাস রাখা বা আত্মবিশ্বাস গঠন করা, মানুষের কাছে নিজের মান বাড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ। আত্মবিশ্বাস আপনার চিন্তা-ভাবনা, কাজের ধরন এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য:

নিজের শক্তি চিনুন: আপনার শক্তি, দক্ষতা এবং ইতিবাচক গুণগুলো চিনে নিন। এই গুণগুলোকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন।
নিজের সফলতা মূল্যায়ন করুন: ছোট ছোট সফলতাগুলোকে মূল্যায়ন করুন এবং আত্মবিশ্বাসী হন।
নেগেটিভ চিন্তা পরিহার করুন: নিজের প্রতি নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করুন। এর পরিবর্তে ইতিবাচক এবং প্রেরণাদায়ক চিন্তা গ্রহণ করুন।
২. নিজেকে উন্নত করুন
নিজের মূল্য বাড়ানোর জন্য আপনাকে সর্বদা নিজের উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিখতে আগ্রহী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন কিছু শিখুন: পড়াশোনা, দক্ষতা বা কোনো নতুন ভাষা শেখা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক। এভাবে আপনি নিজের যোগ্যতা বাড়াতে পারবেন।
নিজের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করুন: নিজেকে আরও উন্নত করতে, আপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোর ওপর কাজ করুন।
বই পড়ুন এবং জ্ঞান অর্জন করুন: বই পড়ার মাধ্যমে আপনি নতুন তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারেন, যা আপনাকে বুদ্ধিমান ও সফল মানুষ হতে সাহায্য করবে।
৩. পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গঠন করুন
আপনার ব্যক্তিত্ব এমনভাবে গঠন করতে হবে, যাতে অন্যরা আপনাকে শ্রদ্ধা করতে পারে। একটি পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মানুষের মধ্যে মানসিক শান্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং সদ্ভাবনা তৈরি করে।

মৌলিক মূল্যবোধ অনুসরণ করুন: সত্য, ন্যায় এবং শ্রদ্ধা মেনে চলুন। নিজের মূল্যবোধের ওপর অবিচল থাকুন।
ভদ্রতা ও সম্মান প্রদর্শন করুন: অন্যদের প্রতি সদ্ভাবনা, শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির মনোভাব রাখুন।
আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধি করুন: আপনার আচরণ ও কথাবার্তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং অন্যদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা এড়িয়ে চলুন।
৪. সুস্থ শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা বজায় রাখুন
শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মানুষের মর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে। যদি আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকেন বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, তাহলে আপনার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কম হতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন: শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে আপনার শারীরিক শক্তি বাড়বে এবং মনোভাবও ইতিবাচক হবে।
সন্তুলিত খাবার খান: স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন যাতে আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে।
যোগব্যায়াম এবং ধ্যান করুন: মানসিক চাপ কমাতে এবং মনের শান্তি অর্জনে যোগব্যায়াম ও ধ্যান খুবই উপকারী।
ভালো ঘুমের অভ্যাস তৈরি করুন: পর্যাপ্ত ঘুম গ্রহণ করলে আপনার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা উন্নত হবে।

৫. আত্মনির্ভরশীলতা গঠন করুন
আত্মনির্ভরশীলতা আপনার নিজের ক্ষমতা এবং দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল থাকার অভ্যাস। আপনি যদি অন্যদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করেন, তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস কম হতে পারে।

আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করুন: অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সচ্ছলতা মানুষের মর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক।
নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হন: নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখুন, অন্যদের উপর নির্ভর না হয়ে নিজের পথ চিহ্নিত করুন।
৬. সম্পর্কের ক্ষেত্রে সচেতনতা
মানুষের কাছে আপনার মূল্য কেবল আপনার কাজ বা অর্জনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আপনার সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও নির্ভরশীল। আপনি যে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবেন, তাদের সঙ্গেও যেন আপনার মান বজায় থাকে।

এগিয়ে আসুন এবং সঙ্গী নির্বাচন করুন: জীবনসঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচন করার সময় সতর্ক থাকুন। যারা আপনাকে সমর্থন দেয় এবং আপনার স্বার্থে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন।
আবেগ ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখুন: আপনার সম্পর্কগুলোতে সততা, বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
৭. অন্যদের সাহায্য করুন
এটি শুধুমাত্র আপনার আত্মমর্যাদা বাড়ায় না, বরং আপনাকে আরও মানবিক এবং সাহসী করে তোলে। অন্যদের সহায়তা করার মাধ্যমে আপনি কেবল তাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারবেন না, আপনার মানও বৃদ্ধি পাবে।

স্বেচ্ছাসেবী কাজ করুন: সমাজের জন্য কিছু করাটা আপনার আত্মমর্যাদা বাড়ানোর একটি চমৎকার উপায়।
আর্থিকভাবে সাহায্য করুন: আপনি যদি সামর্থ্যবান হন, তবে দান বা সাহায্য প্রদান করতে পারেন, এটি মানুষের কাছে আপনার সম্মান বাড়াবে।
৮. ভুল থেকে শিখুন
জীবনের প্রতিটি ভুল একটি শিক্ষা, এবং ভুল থেকে শিখে উন্নতি করা মানুষের মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনীয়।

ভুল স্বীকার করুন: ভুলের জন্য অন্যদের দায়ী না করে, নিজে স্বীকার করুন এবং তার থেকে শিখে উন্নতি করুন।
দুর্বলতাগুলি গ্রহণ করুন: আপনার দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে একদম বিচলিত না হয়ে সেগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে শিখুন।
৯. সময় ব্যবস্থাপনা
যতটা সম্ভব আপনি যদি সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন, তাহলে মানুষের কাছে আপনার মান বাড়বে। সময়ের মূল্য জানলে আপনি অনেক বেশি উৎপাদনশীল এবং পরিকল্পনামাফিক জীবনযাপন করতে পারবেন।

পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার দিন: গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে করুন এবং সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।
ফিরে তাকিয়ে মূল্যায়ন করুন: দিনশেষে কী কী কাজ করেছেন, তা মূল্যায়ন করুন। এতে আপনি নিজের অগ্রগতি দেখতে পাবেন এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
১০. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
সামাজিক দক্ষতা এবং মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষমতা আপনার মান বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কথাবার্তায় মাধুর্য আনুন: কথাবার্তার মধ্যে স্নিগ্ধতা এবং ভদ্রতা রাখা আপনার মূল্য বাড়াবে।
হাসিখুশি থাকুন: মানুষের মাঝে হাসিখুশি থাকা এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা মানুষের কাছে আপনার মান বাড়াবে।
উপসংহার:
নিজের মান বা মর্যাদা বৃদ্ধি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা সময়, প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতা দাবি করে। তবে, যদি আপনি আত্মবিশ্বাসী, সচেতন এবং সদর্থক মনোভাবের অধিকারী হন, তাহলে মানুষের কাছে আপনার মান অটুট থাকবে। আর এই উন্নতি শুধু অন্যদের কাছে নয়, বরং নিজের কাছে আপনার মর্যাদা ও আত্মসম্মানও বৃদ্ধি পাবে।

বরকনে

বিবাহের পরামর্শ

বিবাহের পরিকল্পনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here